ডাক্তারনী চলে গেল


 ডাক্তারনী চলে গেল, তার সব স্বপ্ন-ও গেল সরে
হাসিমুখে সে ফটোতে, শুধু মানুষটা গেল মরে|
তরুণবয়সে কত নিষ্ঠুর হাতে যে ইতি ঘটলো তার
পাশবিকতার সব সীমা তার উপরেই হলো পার|
একটু জিরিয়ে নিতে ৩৬ ঘন্টার ডিউটি পেরিয়ে 
সেই যে গেল.. ঘর থেকে এলো লাশ হয়ে বেরিয়ে 
যদিও ক্ষতবিক্ষত, বিবস্ত্র দেখেও প্রথমে ঘোষণা আত্মহত্যা 
ধামাচাপা দেবার কত চেষ্টা, সব বিকৃত সত্ত্বা!
সেমিনার ঘরে পুলিশ নাটক করে, প্রথমে পায়নি তারা কিছু!
ইমানের দালালি করেছে তারা, বিকেছে মাথাপিছু|
মন্ত্রী, পুলিশ মরিয়া.. কিছু প্রমাণ কি রয়ে গেল বাকি?
মুখ রাখতে নিরুপায় রাণী করেন মঞ্চে হাঁকাহাঁকি|
শেষ বাঁচাতে ওই সেমিনার ঘরের দেয়ালটাকেও ভাঙলো, 
রক্তের সাথে ঘরের কত কথা যে জলেই ধুয়ে গেল..
নির্বাক ঘর সব দেখে গেল, সত্য সেখানে বদ্ধ 
কত প্রমাণ হারালো যে হায়! বিবেক সেখানে স্তব্ধ!
তারপর মেয়েটির বিধ্বস্ত বাবা-মা কে কতরকমের ফোন 
নির্বাকদের পথে আসার জন্য বারেবারে নিমন্ত্রণ!
পুলিশের আর কি দোষ? ওরা রাণীর পদসেবা যাচ্ছে করে
মৃত্যুর তদন্ত করছে ওরা? কিন্তু ওরাও তো গেছে মরে!
চাকর হয়েও চাকর যাদের, তাদের ঠকিয়ে যায়..
বিবেক হনন করে রাণীর চটি চাটছে হায়!
কে সামনে কে আঁধারে, পশুর দলে ছিল কারা?
সবার মুখে এক-ই প্রশ্ন, শুধু পুলিশ বাক্যহারা!
কারা কারা তার সারা দেহ এভাবে খুবলে খেলো?
কোন কারণে কোন পশু তার হাড় গুড়িয়ে দিলো?
কাদের কারণে সর্বাঙ্গে তার এতো রক্তের ছোঁপ?
কাদের কারণে তার সব স্বপ্নে অকালে পড়লো কোপ?
অন্ধকারে কত-কত মুখ চুপটি করে কোণায়
অপরাধী এক সিভিক পুলিশ - প্রশাসন এই গল্প শোনায়!
আড়াল করছে কাদের? তারা কত বড়ো বড়ো মাথা?
পুলিশ-তারা-রাণীমা সব বুঝি একই সূত্রে গাঁথা!
তাহলে কান টানলে মাথা আসে - এটি আবারও হলো সত্যি..
অনেক মুখোশে পড়েছে টান, তাতে সন্দেহ নেই একরত্তি!
হাসপাতালের প্রধান, সে বুঝি রাণীমার প্রিয়পাত্র?
কিন্তু কেন? সে তো রাণীর পায়ে প্লাস্টার করেছিল মাত্র!
আঘাত বিতর্কিত! তবে বুঝি ওটি তার একমাত্র কাজ না
রাণীর পায়ে ঢেলেছে সে আরও আরও অনেক খাজনা!
তাই রঙ্গমঞ্চে ইস্তফার একটি নাটক হয়ে যায়
বিপদকালীন বদলি ওটা! রাণীর ধন্য অধ্যাবসায়!
তারপরে এলো দুর্বৃত্তের দল, রাতের অন্ধকারে
শান্ত প্রতিবাদের মঞ্চ ভাঙলো, কোনো গোপন দরকারে!
ভাঙলো হাসপাতাল-কক্ষ, হানলো তারা আঘাত..
সিন্ডিকেটের সরকারের এরাই শক্ত দুটি হাত|
তবে প্রশ্ন আছে.. পুলিশ ছিলোনা? তারা তবে কি করলো?
এবার কি তারা জেগে উঠে কোনো গুন্ডাকে শেষে ধরলো?
অবাক প্রশ্ন! ধরা পড়লে ওরা সেটাও তো হতো খবর!
পুলিশ কোথায়! শাসন কোথায়! রয়েছে শুধু কবর! 
রাণীমা আজ পথে নামবেন, বাঁচাতে নিজের মুখ
কিন্তু বঙ্গ যে হায় জেনে গেছে যে রাণীর বড় অসুখ!
ক্ষমতার লোভে নিজেকে করেছেন আরও আরও আরও হীন
নিজের স্বার্থে অপরাধীদের পুষে গেছেন তিনি প্রতিদিন|
তাই নাটকীয় এই পদযাত্রা - বঙ্গ অংশ নিওনা তায়
প্রতিবাদে নির্ভীক থেকো, যেন মৃত মেয়েটি বিচার পায়|
ডাক্তারনী চলে গেল, তবে দিয়ে গেল প্রতিবাদ
দেখতে পেলনা মানুষ কেমন কাঁধে মিলিয়ে কাঁধ..
সরব আজ পথে-পথে, সারা দেশে প্রতিবাদের ঢেউ
তার নির্মম হত্যা নীরবে তো মেনে নেয়নি কেউ|
আঁধারে থাকা ওই মুখগুলোর অধীর অপেক্ষায়
পথে সোচ্চার জনসাধারণ, ন্যায় বিচারের আশায়|
তার চিৎকার, যা নাকি ওই ঘরেই বন্ধ ছিল
মান বাঁচাতে রাণীমাকে আজ পথে নামিয়ে দিলো!
তাতে বাচঁবেনা মুখ, বুকে জ্বলবে আগুন, থাকবে ন্যায়ের খিদে
রাণী কিংবা পাইক - এবার সবাই হবে সিধে!
spacer